ফের বিসিবির মসনদে নাজমুল হাসান পাপন

স্পোর্টস ডেস্কঃ  বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে পরিচালক পদে জয় পেয়েছেন সদ্যই সাবেক হওয়া সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি ক্যাটাগরি-২ থেকে নির্বাচন করেন। আজ এ জয়ের মাধ্যমে ফের বিসিবির মসনদে বসতে যাচ্ছেন তিনি। এর আগে নাজমুল হাসান পাপন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সালে সরকার তাকে সভাপতির পদে বসায়। এরপর ২০১৩ ও ২০১৭ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এবার পাপন নির্বাচনে লড়াই করে পরিচালক হয়েছেন।

এছাড়া ক্যাটাগরি-১ ঢাকা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছেন নাইমুর রহমান দুর্জয় ও তানভীর আহমেদ টিটু। রাজশাহী বিভাগে জয় পেয়েছেন সাইফুল আলম স্বপন। ক্যাটগরি-৩ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। এই ক্যাটগরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন ও নামজুল আবেদীন ফাহিম। যেখানে ফাহিমকে ৩৭-৩ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন সুজন। এ ক্যাটাগরিতে হঠাৎ করেই মনোনয়ম ফরম কিনেন ফাহিম। তখন মনে হয়েছিল হয়ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এ দুজনের মধ্যে। কিন্তু ফাহিম কোন উত্তাপই ছড়াতে পারেননি। এই ক্যাটাগরিতে ভোটার ছিলেন ৪৩ জন। যেখানে সাবেক অধিনায়ক, সাবেক ক্রিকেটার, বিভিন্ন সংস্থার ভোটাররা ভোট দিয়ে সুজনকে আবারও পরিচালক পদে বসিয়েছেন।

বিসিবি নির্বাচনে ক্যাটাগরি-২ এ পরিচালক পদে লড়েছেন দুইবারের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। নির্বাচনের মূল আকর্ষণ ছিল এ ক্যাটাগরিকে ঘিরে। কারণ পাপন জয় পেলে তিনি আবার বিসিবির মসনদে বসবেন। ফলে পাপনের ফলাফলের বিষয়েই সবচেয়ে বেশি উদ্দীপনা দেখা গেছে। তবে ফলাফল ঘোষণার আগেই জানা গিয়েছিল বিসিবি বস পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু যে ফলাফল তাই নয়, নির্বাচনের আগেই বোঝা গিয়েছিল পাপন জয় পাবেন। কারণ সাবেক সভাপতি হারার কোন কারণই ছিল না।

এদিকে এর আগে বুধবার (৬অক্টোবর) ভোটের দিন দুপুর ২টায় নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আসেন পাপন। তার আসা নিয়েই বিসিবিতে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা চলছিল। তিনি আসার পর তার ভক্তরা তাকে ঘিরে ধরেন। আর এ কারণে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের মূল ফটকেই গাড়ি থেকে নেমে পড়তে হয় তাকে। সেখানেই পাপনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সমর্থকরা। পরে সে সব সমর্থকদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে বিসিবি কার্যালয়ে ঢোকেন পাপন। সমর্থকরা স্লোগানে স্লোগানে জানান, আবার বিসিবি সভাপতি পদে দেখতে চান পাপনকে। ভোট দিতে যাওয়ার সঙ্গে অবশ্য সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হননি তিনি।

ক্যাটাগরি-২ থেকে বোর্ড পরিচালক হতে লড়ছেন সর্বমোট ১৬ জন। নির্বাচনের সবচেয়ে আকর্ষণ ছিল এই ক্যাটাগরিকে ঘিরে। এটি ক্লাব ক্যাটাগরি। এ ক্যাটাগরি থেকে এবারও নির্বাচিত হয়েছেন নাজমুল হাসান পাপন। তিনি ঢাকা আবাহনী থেকে নির্বাচন করেছেন। তিনি পেয়েছেন ৫৩ ভোট। তার সঙ্গী হয়েছেন গাজী গোলাম মুর্তজা (গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স, ৫৩ ভোট), নজিব আহমেদ (শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, ৫১ ভোট), মাহবুব আনাম (মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব, ৪৭ ভোট), ওবেদ রশীদ নিজাম (শাইনপুকুর ক্লাব, ৫১ ভোট), সালাউদ্দিন চৌধুরী (কাকরাইল বয়েজ, ৪৯ ভোট), ইসমাইল হায়দার মল্লিক (শেখ জামাল ক্রিকেটার্স, ৫২ ভোট), এনায়েত হোসেন (আজাদ স্পোর্টিং,৫২ ভোট), মঞ্জুর হোসেন কাদের (ঢাকা এসেটস, ৪৯ ভোট), মনজুর আলম (আসিফ শিফা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, ৪৬ ভোট), ফাহিম সিনহা (সূর্যতরুণ, ৫১ ভোট), (মিঠু, ৫০ ভোট) ও ইফতেখার রহমান। বিসিবির ২৫ পরিচালকের মধ্যে ১২টিই নির্বাচিত হয়েছে ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে। এই ক্যাটাগরি দুই থেকে ১২ পরিচালক পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৬ জন। তবে দুই থেকে তিনজন পরশু রাতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও, সেটা আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন।

এদিকে সাধারণত ২৫ পদের বিপরীতে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও, দুটি পদ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় থাকায়, নির্বাচন হয় ২৩ পদে। কিন্তু সেখানেও ক্যাটাগরি এক থেকে বিভাগীয় ৭ পরিচালক নির্বাচিত হয়ে যান আগেই। চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর বিভাগে কোন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায়, নির্বাচনের প্রয়োজন হয়নি। তাই ক্যাটাগরি-১ থেকে নির্বাচন হয়েছে মূলত ঢাকা এবং রাজশাহী বিভাগে। আর এ রাজশাহী বিভাগের নির্বাচনেই হেরে যান ক্রিকেটের পরিচিত মুখ খালেদ মাসুদ পাইলট। তাকে হারিয়ে পরিচালক নির্বাচিত হন সাইফুল আলম স্বপন। পাইলট হেরেছেন ৭-২ ভোটের ব্যবধানে। আর ক্যাটাগরি তিন থেকে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের বিপক্ষে লড়েছেন বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

এর আগে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে সকাল ১০টায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ। ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বুধবার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকেই প্রার্থী আর তাদের সমর্থকদের পদচারণায় ভরে যায় গোটা স্টেডিয়াম পাড়া। করোনার কারণে পোস্টাল আর ই-ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকায় মোটে ৭০ জন কাউন্সিলর সশরীরে ভোট দেন।

এদিকে নির্বাচনের আগের রাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-এর পরিচালনা পরিষদ নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের কাউন্সিলর মাসুদুজ্জামান। তিনি ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রিকেট ক্লাবস’ ক্যাটাগরি-২ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। এছাড়া খালিদ হোসেনও নাম প্রত্যাহার করে নেন নির্বাচন থেকে।

এর আগে সিলেট বিভাগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন সিলেট বিভাগের শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আকরাম খান ও আ জ ম নাসির । খুলনা বিভাগ থেকে পরিচালক হয়েছেন শেখ সোহেল। এই বিভাগের প্রতিনিধি হয়েছেন কাজী ইনাম আহমেদ। বরিশাল বিভাগ থেকে আলমগির খান এবারও পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। রংপুর বিভাগ থেকে আনুয়ারুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *