প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও সেনাপ্রধান জেনারেল মিলি কারো কথা কানেই তুলেননি বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বারবার সতর্ক করা হলেও কারও কথাই শোনেননি তিনি। এমনকি কিছু সেনা (২ হাজার ৫০০) রাখার ব্যাপারে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও জেনারেলদের পরামর্শও কানে তোলেননি। আফগানিস্তান বিপর্যয় নিয়ে সিনেটের এক শুনানিতে এমনটাই দাবি করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে বাইডেন বলছেন, সেনা রাখার ব্যাপারে কোনো পরামর্শের কথা তার ‘মনে পড়ছে না’। আফগানিস্তান ইস্যুতে নতুন এসব তথ্য-প্রমাণে বাইডেন সরকারের ওপর বেজায় চটেছেন বিরোধী রিপাবলিকান নেতারা। ব্যর্থতার দায় না নেওয়ায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন ও সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক মিলির পদত্যাগ দাবি করেছেন সিনেটর জোশ হাউলি। চলতি বছরের এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তার এই ঘোষণার পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পুরো দেশ দখলে নেয় তালেবান। এ সময় একদিকে আফগানিস্তান থেকে নিজ নাগরিকদের দেশে ফেরানো ও অন্যদিকে দেশ ছাড়তে মরিয়ে আফগান নাগরিকদের সামলাতে গিয়ে কাবুল বিমানবন্দরে ভয়াবহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। আইএস-কে’র সন্ত্রাসী হামলায় ১৩ সেনা হারায় তারা। নজিরবিহীন এই বিপর্যয়ের কয়েক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের সিনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির শুনানির মুখোমুখি হন পেন্টাগন কর্তারা। সেনা ও নাগরিকদের উদ্ধারকালে দায়িত্ব পালন করলেও এদিনের শুনানিতে কোনো কর্মকর্তারাই আফগান বিপর্যয়ের দায় নেননি। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও আফগান বাহিনীর ওপর দায় চাপিয়েছেন তারা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন স্বীকার করে বলেছেন, আফগান পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেনজি সিনেটরদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তালেবানকে ঠেকাতে তিনি প্রেসিডেন্টকে আফগানিস্তানে ২ হাজার ৫০০ সেনার ছোট একটি দল রেখে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। জেনারেল মিলি বলেন, ম্যাকেনজির ওই পরামর্শর সঙ্গে তিনিও একমত ছিলেন।

আট মাসেই কোণঠাসা বাইডেন : আমেরিকাকে আরও বাসযোগ্য, ন্যায়নিষ্ঠ ও পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন বাইডেন। কিন্তু মাত্র আট মাসের মাথায় একের পর এক সংকটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি। করোনা মহামারি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। দলের মধ্যে বিভাজন বাড়ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন বিল। এদিকে সরকার পরিচালনায় তার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তায়ও ধস নেমেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জো বাইডেনের সামনে এখন ‘অগ্নিপরীক্ষা’। আগামীকাল শুক্রবারই ওয়াশিংটনের পরিস্থিতি তার ও ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ নির্ধারণী হয়ে উঠতে পারে। এদিন কংগ্রেসে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে বাইডেনের বহুল আলোচিত ১.২ ট্রিলিয়ন (১ ট্রিলিয়নে ১ লাখ কোটি) ডলারের অবকাঠামো প্রস্তাব। প্রস্তাবটি ইতোমধ্যে সিনেটে পাশ হয়েছে। তবে ব্যাপক সমঝোতা করতে হয়েছে। তবে হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভসে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে প্রস্তাবটি। এখন শেষ মুহূর্তে এসে বেঁকে বসেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টিরই কিছু আইনপ্রণেতা। এ নিয়ে হোয়াইট হাউজ ও ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে।

আফগানিস্তানের আকাশসীমা লংঘন করায় যুক্তরাষ্ট্রকে তালেবানের হুঁশিয়ারি : আফগানিস্তানের আকাশসীমা লক্সংঘন করায় যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটির তালেবান সরকার। বলেছে, আন্তর্জাতিক আইন ও দোহা চুক্তি লংঘন করে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের আকাশসীমা লংঘন করেছে। আগামী এই ধরনের আচরণের পরিণতি ভয়ংকর হবে। বৃহস্পতিবার এক টুইটার বার্তায় তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘যে কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ ওই দেশের জল, স্থল ও আকাশসীমার মালিক এবং বর্তমানে আফগানিস্তানের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণকারী হিসাবে তালেবান আফগানিস্তানের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *