নিস্তব্ধ ওয়েম্বলিতে ইতালির উৎসব

স্পোর্টস ডেস্কঃ ট্রফি হোমে নয়, গেল রোমেই। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আরেকটি টাইব্রেকারে স্বপ্নভঙ্গ হলো ইংল্যান্ডের। ১৯৯৬ সালের সেমিফাইনালে এই পেনাল্টি শুটআউটে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল তারা। আবারও ভেঙে পড়ল টাইব্রেকারের চাপে। ঘরের মাঠে দর্শকদের পাশে নিয়েও ৫৫ বছরের শিরোপা খরা ঘুচলো না। প্রথমবার ইউরোর ফাইনাল রূপ নিলো বিষাদে। টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে জিতে ৫৩ বছর পর প্রথমবার ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন হলো ইতালি, যা তাদের দ্বিতীয়। নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয়েছিল ১-১ গোলে, অতিরিক্ত সময়েও তা ছিল অপরিবর্তিত।

উৎসবের কতশত প্রস্তুতি। গভীর রাত পর্যন্ত পানশালা খোলা রাখা, গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে হৈ-হুল্লোড় করা। সোমবার দেশের সবগুলো ব্যাংক বন্ধ রাখতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে অনুরোধ করেছিল ইংল্যান্ডবাসী। তাদের ঘরে ফিরবে ট্রফি, আর সেই আনন্দে সারাদিন মাতোয়ারা হয়ে থাকবে। ৫৫ বছর পর ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মুহূর্তটুকুর স্বাক্ষী হতে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করেছেন ভক্ত-সমর্থকরা। নিরাপত্তাকর্মীদের হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণে।

আর ম্যাচের যখন ২ মিনিট, তখনই ওয়েম্বলির ফেটে পড়া আওয়াজ বাইরের ভক্ত-সমর্থকদের আরও উতলা করে তুলেছিল। ইউরোর ফাইনালে দ্রুততম গোল করে লুক শ তাদের স্বপ্নপূরণের পথে ছিলেন। কিন্তু ওই একবারই। আহত বাঘ ইতালি হুঙ্কার ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে মুহুর্মুহু আক্রমণ শানিয়ে। প্রথম ৪৫ মিনিটে পাঁচবার গোলের চেষ্টা করে ব্যর্থ আজ্জুরিরা দ্বিতীয়ার্ধে আরও মরিয়া হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত পায় সমতা ফেরানো গোলের দেখা।

ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে সেখানেও কয়েকবার জয়সূচক গোলের খুব কাছাকাছি ছিল। যদিও ম্যাচের ফয়সালা হয়নি। টাইব্রেকারে ম্যাচ গড়ালেও ইংল্যান্ড তখন ট্রফি ঘরে ফেরার স্বপ্নে বিভোর। এমনকি প্রথম শটে ইতালির বেরার্দি জালে বল জড়ালেও। ইংল্যান্ডও প্রথম শটে জাল খুঁজে পায় হ্যারি কেইনের ডান পায়ে। ইতালির দ্বিতীয় শটে বেলোত্তিকে পিকফোর্ড ঠেকালে যেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন আরও গভীর হতে থাকে। ম্যাগুইরের গোলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। বোনুচ্চি গোল করে ইতালিরও আশা জাগিয়ে রাখেন। তৃতীয় শটে র‌্যাশফোর্ডের ক্রসবারে আঘাত যেন দেশবাসীর বুকে লেগেছিল। বের্নার্ডেশচি ইতালির তৃতীয় গোল করেন। জ্যাডন সানচোকে রুখে দেন ইতালি গোলকিপার দোনারুম্মা। জর্জিনহোকে ঠেকিয়ে পিকফোর্ডও লড়াই টিকিয়ে রাখেন। তবে বুকায়ো সাকাকে সেভ করে ইতালিকে আনন্দে ভাসান দোনারুম্মা। আর ৬০ হাজারেরও বেশি দর্শকে ঠাসা ওয়েম্বলি হয়ে পড়ে নিস্তব্ধ।

এর আগে ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে কিয়েরান ট্রিপিয়ারের ক্রস থেকে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নেন শ। ম্যানইউ ডিফেন্ডারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল বৃথা যায় ৬৭ মিনিটে লিওনার্দো বোনুচ্চির গোলে। সমতাসূচক গোলের আগে পরে ইতালি লক্ষ্যে রেখেছিল ৬টি শট। ইংলিশ গোলকিপার পিকফোর্ড বীরত্বে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি আজ্জুরিরা। কখনও কখনও ভাগ্য সহায় হয়নি।

শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডকে তাদের মাটিতে হারিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করলো ইতালি। টানা ৩৪ ম্যাচ অজেয় থেকে ৫৩ বছর পর প্রথম ইউরো জিতলো তারা। শেষবার ১৯৬৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা যুগোস্লাভিয়াকে হারিয়ে। পরে ২০০০ ও ২০১২ সালে ফাইনালে উঠলেও ট্রফিতে হাতছোঁয়া হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *