ইস্ট ইয়র্কশায়ারের বন্দর নগরী হাল। এখানকার অধিবাসী ৩ বছর বয়স্ক আইজ্যাক মৃগী রোগে গুরুতরভাবে আক্রান্ত। প্রতিদিন তাঁর প্রায় ৮০বার খিঁচুনি হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হঠাৎ কোনো খিঁচুনি তাঁর জন্য মারাত্মক হতে পারে। আইজ্যাক এর শারীরিক এই অবস্থায় তাঁর মা চান আইজ্যাককে মেডিসিনাল কেনাবিস, অর্থাৎ ওষুধ হিসেবে যে গাঁজা সেবন করা হয়, সেটি দেয়া হোক। যদিও ব্রিটেনে এখন বৈধভাবেই এই ওষুধ ডাক্তাররা দিতে পারেন, তারপরও আইজ্যাকের মা এমন কোন ডাক্তার পাচ্ছেন না, যিনি মেডিসিনাল কেনাবিসের প্রেসক্রিপশন দিতে ইচ্ছুক।
বয়স তিন বছর হলেও আইজ্যাক হাঁটতে পারেনা, কথা বলতে পারেন, খেতেও পারেনা। জন্মগত সমস্যার কারণে সে তীব্র মৃগী রোগে আক্রান্ত। আইজ্যাকের মা ডাক্তারকে দেখানোর জন্য তাঁর কিছু খিঁচুনির দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করে রাখেন।
দিনে প্রায় ৮০টি খিঁচুনি হয় আইজ্যাকের। কয়েক বছরের মধ্যে হঠাৎ কোন খিঁচুনিতে তাঁর মৃত্যুও হতে পারে। মৃগী রোগের ১৩টি ওষুধ তাঁরা প্রয়োগ করে দেখে ফেলেছেন। কোনটাই আইজ্যাকের ক্ষেত্রে কাজ করেনি। আইজ্যাকের মা ঘুমাতে যেতে পারেননা। তাঁর ভয় হয়, ঘুম থেকে জেগে যদি দেখেন তাঁর ছেলে আর বেঁচে নেই!
ব্যাক্তি উদ্যোগে বেসরকারিভাবে মেডিক্যাল কেনাবিস পেতে হলে বছরে প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড ব্যয় করতে হবে আইজ্যাকের মা সারাহকে। কিন্তু এই ওষুধ দেয়ার লাইসেন্স আছে, এমন চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা নতুন রোগী নিতে পারবেন না। ২০১৮ সাল থেকে মেডিসিনাল কেনাবিস, অর্থাৎ গাঁজা থেকে তৈরি করা ওষুধকে বৈধতা দেয়া হয়েছে ব্রিটেনে। কিন্তু এ পর্যন্ত মাত্র দুটি শিশুকে এই ওষুধ দেয়া হয়েছে।
হাল রয়েল ইনফারমারিতে আইজ্যাকের পিডিট্রিশিয়ানের মেডিসিনাল কেনাবিসের প্রেসক্রিপশন দেয়ার অনুমোদন, অর্থাৎ লাইসেন্স নেই। লীডসের কনসালটেনটকে এটি দিতে হবে। তাঁরা বিবিসিকে জানিয়েছে, তাঁরা ব্রিটিশ পিডিয়াটরিক নিউরলজি এসোসিয়েশনের নির্দেশিকা অনুসরণ করে থাকে। এই নির্দেশিকায় বলা আছে, মেডিসিনাল কেনাবিস দিয়ে চিকিৎসা করে উপকার পাওয়া যায়, এমন যুক্তির পক্ষে যথেষ্ট ভালো প্রমাণ নেই। মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য মেডিসিনাল কেনাবিস প্রয়োগ সম্পর্কে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, একমাত্র শেষ ভরসা হিসাবে এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে। আর ডাক্তাররা মেডিসিনাল কেনাবিসের বিষয়ে ঢালাও সিদ্ধান্ত নেননা। ঝুঁকির চেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশী থাকলে মেডিসিনাল কেনাবিসের প্রেসক্রিপশন দেয়া হয়।
এনএইচএস ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে, যেহেতু মেডিসিনাল কেনাবিসের প্রেসক্রিপশন দেয়ার ক্ষেত্রে পেশাদারী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন, তাই তাঁরা চিকিৎসকদের অননুমোদিত ওষুধ রোগীদের দেয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারেনা।
মেডিসিনাল কেনাবিস টাকা খরচ করলে পাওয়া যায়। অবৈধভাবে বিদেশ থেকে পাচার করে আনতে হয়। আইজ্যাকের মায়ের এখন যে নিরুপায় অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, এখন তাঁকে সেই কাজই হয়তো করতে হবে। ব্রিটেনে শেষ পর্যন্ত প্রেসক্রিপশনে এই ওষুধ না পেলে তিনি ইজরায়েল যাবেন মেডিসিনাল কেনাবিসের জন্য।