বিনোদন ডেস্কঃ মার্চ ২০২০ থেকে ২০২১, এক বছর পেরিয়ে গেল। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ২২ মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল টেলিভিশন নাটকের শুটিং। তার পরের গল্পটা অন্য রকম, নাটকের মানুষদের জন্য হাহাকারের, হারানোর।
শুরুতে নাটকের শতভাগ কর্মীই বেকার হয়ে পড়েছিলেন তখন। অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন ছোট পর্দার প্রায় ১ হাজার ১০০ কলাকুশলী। শুটিং না থাকায় তাঁদের বেশির ভাগের ঘরে খাবারের সংকট তৈরি হয়, এমনকি বাড়িভাড়ার টাকাও দিতে পারছিলেন না কেউ কেউ। দীর্ঘদিন শুটিং বন্ধ রাখায় অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। অনেকে বদলে ফেলেছিলেন পেশা। শুটিং বন্ধ হওয়ায় অনুষ্ঠান প্রচার নিয়ে জটিলতায় পড়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। যদিও পাঁচ মাস পর ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করে। মাস্ক পরে শুটিংয়ে ফেরেন অনেকেই।
কোনো নাটকের একটি বা দুটি দৃশ্যের শুটিং বাকি ছিল, কোনোটার এক দিনের। শুটিংয়ের মাঝপথেই আটকে যায় প্রায় ৪০টি নিয়মিত প্রচার হওয়া ও নতুন ধারাবাহিকের শুটিং। এ সময়ে ভেস্তে যায় প্রায় ৭০০ ঈদ নাটকের পরিকল্পনা। বন্ধ হয়ে যায় পুবাইল ও উত্তরার তিনটি শুটিংবাড়ি। অভিনয়শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিভিশন প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, এখনো বেশির ভাগ অভিনয়শিল্পী নিয়মিত কাজ করছেন না। অনেকে আবার আগে থেকেই ছিলেন বেকার। আরও শোচনীয় অবস্থায় পড়েন তাঁরা। ডিরেক্টরস গিল্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, ‘প্রথম ১০ দিন খুব আনন্দে কেটেছিল। পরিবারকে সময় দিচ্ছিলাম। পরে যখন করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে, তখন আমাদের অঙ্গনের বেশির ভাগ মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কারণ, আমাদের জীবিকা শুটিংকেন্দ্রিক। তখন সবাই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাই। পাওনা টাকাও দিচ্ছিলেন না কেউ।আমাদের অনেক সহকর্মী এখনো নিয়মিত কাজ করছেন না।’
নাটকের শুটিং বন্ধ হওয়ায় বেকায়দায় পড়ে যায় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। ফুরিয়ে যায় সংগ্রহে থাকা নাটক। বিটিভি, চ্যানেল আই, এনটিভি, বাংলাভিশনসহ সব চ্যানেল দেখাতে শুরু করে পুরোনো ও দর্শকপ্রিয় নাটকগুলো। ঘরবন্দী মানুষকে আনন্দ দিতে দেখানো হয় ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘৪২০’, ‘ভবের হাট’, ‘রঙের মানুষ’–এর মতো নাটকগুলো। ঘাটতি ছিল দুই ঈদের নাটকেরও। বাংলাভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান তারেক আকন্দ বলেন, ‘শুটিং স্থগিত হওয়ায় অনেক নিয়মিত প্রোগ্রাম বন্ধ করতে হয়েছিল। সেই সময় আমাদের কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসছিল না। দর্শক ধরে রাখার জন্য আগের নাটক চালাতে হয়েছিল। দিনগুলো ছিল বিভীষিকাময়। এখন আমরা ম্যানেজ করা শিখেছি। হয়তো ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারিনি। কিন্তু আগের মতো অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য ফিরেছে। ঈদের জন্যও এবার আলাদা প্রস্তুতি আছে।’
এরই মধ্যে ঘরে বসে মোবাইল ফোনে শুটিং করে নাটক ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানাতে শুরু করেন অভিনয়শিল্পীরা। এই তালিকায় ছিলেন, তাহসান, নিশো, মেহজাবিন, বিদ্যা সিনহা মিমসহ অনেকে। ধীরে ধীরে আতঙ্ক কাটতে শুরু করলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জুন থেকে শুটিংয়ে ফেরেন পরিচালক, প্রযোজক ও কলাকুশলীরা। অনেকেই শুটিংয়ে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন। করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, আসাদুজ্জামান নূর, আজিজুল হাকিম, অপূর্ব, তাহসান, তানজিন তিশা, স্পর্শিয়া, নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ, মিজানুর রহমান আরিয়ান, প্রমুখ। জীবিকার তাগিদে এরপরও থেমে থাকেনি শুটিং। স্পটের নিরাপত্তা ও সতর্কতা বাড়িয়ে নির্মাণ শুরু করেন পরিচালকেরা। এ কারণে নাটকের বাজেট ৩০ ভাগের মতো বেড়ে যায়। গত এক বছরে করোনায় নাট্যাঙ্গন হারিয়েছে অনেককে।
তাঁদের মধ্যে আছেন আলী যাকের, কে এস ফিরোজ, মিনু মমতাজ, মহিউদ্দীন বাহার, মান্নান হীরা, সেলিম আহমেদ, নির্মাতা স্বপন সিদ্দিকী, এনটিভির অনুষ্ঠানপ্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ প্রমুখ। অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘করোনায় গত এক বছরে আমরা কঠিন সময় পার করেছি। এই সময় আমরা কোনো সরকারি সহায়তা পাইনি। তবু যাদের সহযোগিতা দরকার ছিল, সবার পাশে দাঁড়িয়েছি।’
উল্টো চিত্র হিসেবে দর্শক এখন আগের চেয়ে বেশি ইউটিউবে নাটক দেখছেন। অনেক প্রযোজক ইউটিউব নাটকের জন্য অভিনয়শিল্পীদের অগ্রিম পারিশ্রমিকও দিয়েছেন।